Note : জরিপের ফলাফল দেখতে ভোট দিন
05-09-2023 | 06:38 am
শিল্প-সাহিত্য
এস এম তাজুল ইসলাম : সিলেট বিভাগের সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। বাজেট এলেই দেশের মানুষের মনে পড়ে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর কথা। একজন অর্থমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদে ১২টি বাজেট উপস্থাপন করে অনন্য রেকর্ড গড়ে গেছেন তিনি।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ এম সাইফুর রহমানের জন্ম ১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহারমর্দ্দান গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি সিলেট এমসি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশ-বিদেশের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দেন এবং শেরে বাংলা মুসলিম হলের ভিপি নির্বাচিত হন। এসময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এক মাস কারাভোগ করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম সম্মান শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি চলে যান বৃটেনে।সেখানে হিসাব বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ প্রফেশনাল ডিগ্রিধারী প্রতিষ্ঠান দ্যা ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্সি, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস থেকে সিএ সম্পন্ন করে সনদ গ্রহণ করেন।
১৯৭৬ সালে সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জিয়াউর রহমানের সরকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে সারা সাইফুর রহমানের ভিন্ন এক জীবন শুরু। এরপর প্রথমে জিয়াউর রহমানের জাগো দলে। পরে জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপি গঠন করলে এম সাইফুর রহমান সে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। বিশেষ করে সিলেট বিভাগে রিয়াল এডমিরাল মাহবুব আলী খান আর সাইফুর রহমান বিএনপি সুসংগঠিত করেন।
এম সাইফুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। দলের হয়ে ১৯৭৯ সালে মৌলভীবাজার -৩(সদর-রাজনগর) আসন, ১৯৯৬ সালে মৌলভীবাজার -৩ (সদর -রাজনগর) ও সিলেট -৪( জৈন্তাপুর- গোয়াইনঘাট) আসন এবং ২০০১ সালে মৌলভীবাজার -৩ (সদর -রাজনগর) ও সিলেট -১ (সিলেট - কোম্পানীগঞ্জ) আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। যেখানে সাইফুর রহমানের আন্তর্জাতিক সম্মান ছিলো অতুলনীয় সেখানে। জাতীয় সংসদে তিনি মোট ১২ বার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করে এক বিরল রেকর্ড গড়ে রেখেছেন। প্রয়াত এই মন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্মানও ছিল সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গের মতো ।১৯৯৪ সালে বিশ্ব ব্যাংকের গোল্ডেন জুবলি কনফারেন্স এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
‘প্রয়াত নেতা সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান প্রবর্তিত ভ্যালু এডেড টেক্সেস (ভ্যাট), কর ব্যবস্থার সংস্কার, শিল্প ব্যবস্থায় প্রাইভেটাইজেশন এবং উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থা বাংলাদেশর অর্থনৈতিক অবস্থার আমুল পরিবর্তন সাধন করেছে। বলা যায় তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিনত করতে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি।
‘১৯৮৯-৯১ সালেও শমসেরনগর, টেংরাবাজার বা ব্রাহ্মণবাজার যেতে হতো কাঁচা সড়কে পায়ে হেঁটে। নব্বইয়ের দশকে সেই এলাকার যারা দেশের বাইরে গেছেন এমন লোকজন এখন দেশে ফিরলে মনে হবে সবই অচে না। চারদিকে শুধু পাকা সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট আর অত্যাধুনিক স্থাপনা। স্কুল কলেজে সুউচ্চ ভবন। গোটা সিলেট বিভাগে এমন হাজারো পরিবর্তন। জেলা থেকে বিভাগ, পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আরও কতো কিছু। এ সবই প্রয়াত মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের অবদান।’
সিলেটের মাটি ও মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। ২০০৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেট সফর করে হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) মাজার জিয়ারত করে সেখানে রাত্রিযাপন করেন। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর পৈত্রিক বসতবাড়ি বাহারমর্দ্দান ঘুরে ঢাকা ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ এলাকায় নিজের জিপ গাড়িটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
সিলেট অঞ্চলের আরও অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ হারিয়ে গেছেন। কিন্তু এখনো সিলেটের পথে প্রান্তরে এম সাইফুর রহমানের নাম মুখে মুখে ফেরে।
পারিবারিক জীবনে ৩ ছেলে ও এক মেয়ের জনক।